ক্লাস শেষে ভার্সিটির গ্রাউন্ড ফ্লোরে দারিয়ে আছি । বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ঝরছে। বৃষ্টি বিলাস করতে নেমে পরলাম বৃষ্টিতে ভেজা পিচঢালা পথের বাকে। মিনিট পাচেক হাটলেই পেয়ে যাবো অটোরিকসা তাই একটু ধীর গতিতেই হাটতে লাগলাম। পকেটে মোবাইল ফোন, বেগে বই খাতা সব ভিজে যাচ্ছে সেই দিকে কোন খেয়ালও নেই। আমি আমার মত এমন কিছু পাগল রাস্তায় খুজতে লাগলাম কাউকে পেলাম না, সবাই আশেপাশের দোকান গুলোতে দারিয়ে আছে। আমি হাটছি আর বৃষ্টিকে সংগ দিচ্ছি। খুব ভালো লাগছে বৃষ্টিতে ভিজতে। বৃষ্টির ঝাপটা ভিজিয়ে দিচ্ছে আমার মুখ । এ যেন প্রেয়সীর হাতের ছোয়া। হঠাৎ রাস্তায় আমার মত আরেকজন পাগলকে দেখতে পেলাম। ওর নাম ঝিনুক, আমার কাজিন। যাকে আমি আনেক আগে থেকেই খুব পছন্দ করি। ও কোচিং শেষে বাড়ি ফিরছিলো। বৃষ্টি ভেজা ওর মুখখানি কতটা সুন্দর লাগছিলো তার একমাএ সাক্ষী ঐ বৃষ্টি। আমি চেয়ে আছি ওর দিকে। ও আমাকে বললো আসুন কোথও দারাই। আমি মনে মনে বলি বান্দা হাজির।গিয়ে একটা ছাউনির নিচে দারালাম। আশেপাশের মানুষগুলো তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে আর আমি তাকিয়ে আছি ওর দিকে। ওকে চা খাওয়ার প্রস্তাব করলে ও রাজি হলো কিন্তু আশেপাশে কোন চায়ের দোকান ছিলো না তাই আর চা পান করা হলো না। ও আমাকে বললো ইস্ এমন বৃষ্টির দিনে রিকসায় ঘুরতে আমার খুব ভালো লাগে। আমি ওকে বললাম সন্ধা হয়ে যাচ্ছে বাসায় সমস্যা হবে না ও বললো বাসায় গিয়ে বলবে কোচিং থেকে একটু দেরি করে ফিরেছে। চলেন যাই । আমি মনে মনে বলি বান্দা হাজির। দুজন রিকসায় উঠলাম, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ঝরছে। ও আমার পাশে বসে আছে এ যেন আমার কাছে স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে। দুজন অনেক গুরুত্বপূর্ন বিষয় ( আজাইরা ) নিয়ে আলাপ করছি। কিন্তু বৃষ্টি ভেজা ওর মুখখানি আমাকে বারে বারে যেন কোথায় হারিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। একসময় শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি, আমি হাত দিয়ে কিছু বৃষ্টির শান্তধারা ওর মুখে ছিটিয়ে দিলাম। ইচ্ছে করছিলো ওর হাতটা ধরতে ওকে ভালোবাসার কথা বলতে। কিন্তু ও যদি খারাপ কিছু ভেবে বসে এই ভেবে আর ওর হাতটা ধরা হলো না। বৃষ্টি তখন ঝরছে অকৃপন ভাবে। আর আমি ওর পাশে বসে আছি। ও আমাকে জিঙ্গেস করলো আমার ঠান্ডা লাগছে কিনা? আমার খুব ঠান্ডা লাগছিলো তবুও ভাব নেবার জন্য বললাম না আমার ঠান্ডা লাগছে না। ও বললো ওর খুব ঠান্ডা লাগছে। আমার ইচ্ছে করছিলো ওকে জরিয়ে ধরি, ভালোবাসার কথা বলি, সাহস হলো না। পরীক্ষায় এবারো ফেল মারলাম।
আলো আধারের খেলার মাঝে আমাদের রিকসা এগিয়ে চলছে। রাস্তায় রিকসা থামিয়ে ওকে ১টা চিপ্ছ , ১ টা ক্যাটবেরি চকলেট কিনে দিলাম। ওর বাসার খুব কাছাকাছি চলে এসেছি আমরা। এখনি ও চলে যাবে। আমি ওকে আমার ভালোবাসার না বলা কথাগুলো বলতে পারিনি। এ কথা ভাবতে ভাবতে রিকসা এসে ওর বাসার সামনে থামলো। ও আমাকে ভালো থাকবেন বলে চলে গেলো, আমি আবার একা হয়ে গেলাম, বড় একা, সংগী শুধু কয়েক ফোটা বৃষ্টি আনন্দময় মুহুর্তগুলো। ও চলে যাবার পর থেকেই বুকটা কেমন ফাকা ফাকা লাগছিলো। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে গান শুনতে বসলাম। খুব প্রিয় একটা গান হাবিবের " চলো ভিজি বৃষ্টিতে "। ওর জন্য খুব খারাপ লাগছিলো। নিজের প্রতিও খুব অভিমান হচ্ছিলো, কেন ওকে কিছু বললাম না। দু চোঁখ দিয়ে অশ্রুর ফোয়ারা ভিজিয়ে দিলো আমার মুখখানি। একি ক্ষুদ্র সময়ে ওকে কাছে পাবার আনন্দ অশ্রু ? বসে বসে ভাবতে লাগলাম। জানি না ও আমাকে নিয়ে এখন ভাবছে কিনা? ও আমাকে নিয়ে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখছে কিনা ? তবুও ওর ভালোবাসা পাবার পাবার প্রতিক্ষায় থাকলাম। আবার হয়তো দেখা হবে ভেজা ঐ পিচঢালা পথে। আর বৃষ্টিকে আজ প্রানভরে ভালোবাসার সুবাস দিতে চাই। কারন এই বৃষ্টি ওকে আমাকে দেখা করিয়েছে। আমার খুব ইচ্ছে ছিলো যে , আমি আমার ভালোবাসার মানুষ কে নিয়ে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজবো, আর ওকে আমার ভালোবাসার কথা বলবো। সেই স্বপ্নটা আজ আমার কারনেই পরিপূর্নতা পেলো না।
বৃষ্টির মাঝে তুমি আমি
ভেজা এক পিচঢালা পথে
তোমার হাতে রেখে হাত
ভালোবেসে হারাবো অজানাতে.......
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১১ রাত ৯:৫৬